টাঙ্গাইল শহরের আকুর টাকুর বটতলা বাজারে পৌরসভার পক্ষ থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে উদ্ধারকৃত জমিতে নতুন ভবণ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। কৌশলে প্রভাব খাটিয়ে রেস্তোরাঁর নামে বহুতল ভবণ নির্মাণ করছে বলে পৌরসভার প্যানেল মেয়র তানভীর ফেরদৌস নোমানের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ উঠেছে।

শুধু প্যানেল মেয়র নয়, রেস্তোরাঁর আশপাশের বেশির ভাগ দোকান মালিকদের বিরুদ্ধে সরকারি খাসজমি দখল করার অভিযোগও রয়েছে। এতে উদ্ধারকৃত জমি পুনরায় বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এতে স্থানীয়ের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অপরদিকে পৌরসভার রাস্তায় রেস্তোরাঁ নির্মাণ করায় শহরের যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্যানেল মেয়র নোমানের দাবি তার ব্যক্তিগত জমিতেই রেস্তোরাঁ নির্মাণ করছেন তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্বাধীনতার পূর্বে লৌহজং নদী থেকে আকুর টাকুরপাড়া হয়ে পিটিআই পর্যন্ত খাল ছিল। এ খালে মাছ ধরা, সাঁতারও কাটা যেত। পরবর্তীতে এ খালটি পৌরসভার ড্রেন হিসেবে ব্যবহার হতো। ১৯৮০ সালের আগে এ এলাকায় দুই-একজন করে ব্যবসায়ী কাঁচামালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বিক্রি শুরু করে। পরবর্তীতে ব্যবসায়ী ও ক্রেতার সংখ্যা বেশি হওয়ায় এটি বটতলা বাজার নামে ইজারা দেয় টাঙ্গাইল পৌরসভা।

সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পৌরসভার অনুরোধে যৌথ বাহিনী এ বাজারের সব তিনতলা অবৈধ স্থাপনা ভেঙে খালি করে। পরে উদ্ধারকৃত জমিটি পৌরসভাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর আবারো জায়গাটি নানা কৌশলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা দখল করে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়।

এদিকে শহরের যানজট নিরসনে টাঙ্গাইল পৌরসভার উদ্যোগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সাড়ে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে বেবিস্ট্যান্ড থেকে আকুর টাকুরপাড়া হয়ে ময়মনসিংহ সড়কের সাবালিয়া সিএমবি রোড পর্যন্ত রাস্তার প্রস্থতা বৃদ্ধিসহ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরবর্তীতে এ বটতলা বাজারটি সড়কে যানজটের কারণ হওয়ায় বাজারটি সরানোর উদ্যোগ নেয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। বাজারটি সরিয়ে গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর সিটি বাজারের উদ্বোধন করা হয়। বাজারটি ফাঁকা হওয়ার সুযোগে নানা কৌশলে টাঙ্গাইল পৌরসভার প্যানেল মেয়র তানভীর ফেরদৌস নোমান তার প্রভাব খাটিয়ে রেস্তোরাঁ নির্মাণের নামে সরকারি খাসজমি দখল করছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি- শুধু এই রেস্তোরাঁ নয়, এলাকার বেশির ভাগ দোকানই সরকারি খাস জায়গার মধ্যে রয়েছে।

আনিস মিয়া নামের এক বাসিন্দা বলেন, চার যুগ আগে এখানে খাল ছিল। আমরা সাঁতার কেটেছি, মাছ ধরেছি। খালটি ড্রেনে পরিণত হওয়ার পর আস্তে আস্তে দখল হয়ে যায়। ‘ওয়ান ইলেভেনের’ সময় এ জায়গার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পরবর্তীতে আবার দখল করে প্রভাবশালীরা দোকান ভাড়া দেয়। এখন থেকে বাজার সরে গেলেও যেভাবে রেস্তোরাঁ নির্মাণ করা হচ্ছে তাতে যানজট সৃষ্টি হবে।

হুমায়ন নামে আরেকজন বলেন, ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল করার জন্য অনেকেই অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করেছে। আবার কেউ কেউ নতুন নির্মাণ শুরু করেছেন। এতে ব্যক্তির উপকার বা আয় হলেও শহরবাসীর জন্য তেমন কোনো উপকার হবে না। উল্টো যানজটের সম্ভাবনা হওয়ায় এটি শহরবাসীর জন্য গলার কাঁটা।

পথচারী আবুল কালাম বলেন, দেখেই বোঝা যাচ্ছে খাবারের দোকানটি সরকারের খাসজমি ও পৌরসভার রাস্তার উপর নির্মাণ করা হচ্ছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাচালক আজগর আলী বলেন, শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মধ্যে এটি একটি। রাস্তার পাশে খাবারের হোটেল হলে অনেকেই রাস্তায় পার্কিং করে খাবার খেতে হোটেলের ভিতরে প্রবেশ করবে। এতে আমার মতো অনেক চালককে যানজটে আটকা পড়ে থাকতে হবে। এখন হোটেল ভাঙা হলে মালিককের তেমন ক্ষতি হবে না। অপরদিকে শহরের যানজট নিরসনে এ রাস্তাটি গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

অভিযোগ অস্বীকার করে প্যানেল মেয়র তানভীর ফেরদৌস নোমান বলেন, কোনো সরকারি জায়গা দখল করে রেস্তোরাঁ নির্মাণ করছি না। ওই জমির কাগজপত্র আছে। প্রতি বছর আমরা খাজনা পরিশোধ করি। পৌরসভার রাস্তা পরিমাপ করেই রেস্তোরাঁ নির্মাণ করছি।

টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এসএম সিরাজুল হক আলমগীর বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অবৈধভাবে দখল করলে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।